শেরপুরের নকলা উপজেলার পৌরসভাধীন ধুকুড়িয়া গ্রামে মামার বাড়িতে বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধা সারোয়ার আলম দুলাল স্বাধীনতার ৫১ বছর পর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আজিজ-এর সহযোগিতায় অবশেষে জাতীয় পরিচয় পত্রের (এনআইডি) আবেদন করেছেন।
বুধবার (২ মার্চ) চতুর্থ জাতীয় ভোটার দিবস-২০২২ উপলক্ষে নকলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আজিজ-এর একান্ত প্রচেষ্ঠায় ও উপজেলা নির্বাচন অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বিক
সহযোগিতায় প্রায় ৩ ঘন্টা চেষ্টার পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা সারোয়ার আলম দুলাল-এঁর এনআইডি পাওয়ার জন্য তাঁর ফিঙ্গার প্রিন্ট, ছবি, চোখের আইরিশ ও আবেদন ফরমে স্বাক্ষর নিয়ে যথাযথ ভাবে আবেদন সম্পন্ন করেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সারোয়ার আলম দুলালের স্থায়ী ঠিকানা জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার নালিতাবাড়ী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের সিটপাড়া মহল্লা এবং বর্তমান ঠিকানা নকলা উপজেলার পৌরসভাধীন ধুকুড়িয়া গ্রামের মামার বাড়ি। তিনি নালিতাবাড়ী পৌরসভার সিটপাড়া এলাকার মৃত আশকর আলী ও মৃত শামছুন্নাহার দম্পত্তির সন্তান।
জানা গেছে, নালিতাবাড়ী পৌরসভা কর্তৃক প্রদেয় জন্ম নিবন্ধন মূলে বীর মুক্তিযোদ্ধা সারোয়ার আলম দুলাল মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করতেন। কিন্তু সরকারি বিধান অনুযায়ী জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) না থাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সারোয়ার আলম দুলালের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা স্থগিত হয়ে যায়। দীর্ঘ প্রায় দুই বছর তাঁর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা স্থগিত থাকার পরে চলচিত্র পরিচালক (খাইরুন সুন্দরী) নালিতাবাড়ীর এ.কে সুহেলের মাধ্যমে বিষয়টি নকলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আজিজ জানতে পারেন। এর পর থেকে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জাতীয় পরিচয় পত্রের (এনআইডি) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আজিজ নকলা নির্বাচন অফিসে আনতে একাধিক বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। কারন ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা কোন ক্রমেই বাড়ির বাহিরে যেতে রাজি নন।
অবশেষে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা
তারেক আজিজ তাঁর লোকবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা সারোয়ার আলম দুলালের বর্তমান ঠিকানা ধুকুরিয়া মৃত আতর আলী মাষ্টার সাহেবের বাড়িতে হাজির হন। প্রায় ৩ ঘন্টা চেষ্টার পরে যথাযথ ভাবে আবেদন করাতে সক্ষম হন।
এতে করে বীর মুক্তিযোদ্ধা সারোয়ার আলম দুলালের জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তৈরী হবে এবং সমাধান হবে এনআইডি জটিলতায় বন্ধ থাকা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তুলার সকল সমস্যা। এমনটাই আশা করছেন উপজেলার বিভিন্ন পেশা-শ্রেণীর জনগন। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) তৈরীতে বিশেষ ভুমিকা রাখায় নকলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আজিজ-এর প্রতি এলাকাবসীরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আজিজ এবিষয়ে বলেন, জাতীয় ভোটার দিবসে দেশের একজন সূর্য্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা সারোয়ার আলম দুলাল-এঁর জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) এর কাজ নিজের হাতে করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। এতেকরে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তুলার ক্ষেত্রে আরকোন বাধা রইলোনা বলে তারেক আজিজ মনে করছেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ দিন যাবৎ নকলা উপজেলায় ধুকুরিয়া গ্রামের মৃত আতর আলী মাষ্টারের বাড়ির একটি ঘরের বারান্দার একটি কক্ষে একাকি বসবাস করেন। অবিবাহিত (চিরকুমার) এই বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজের হাতে রান্না করে খান। করো হাতের রান্না করা খাবার তিনি গ্রহন করেন না বা খাননা। তাছাড়া তিনি বেশি কথাবার্তা বলেন না, এমকি কারও বেশি কথা পছন্দও করেননা। সবসময় চুপচাপ থাকতে পছন্দ করেন। তবে মৃত আতর আলী মাস্টারের বাড়ির পাশে প্রতিষ্ঠিত আফজালুন নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাত্যাহিক সমাবেশে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় দেশ, জাতীয় পতাকা ও জাতির প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের দৃশ্য সকলকে ভাবিয়ে তুলে বলে স্থানীয় অনেকে জানান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সারোয়ার আলমের মুক্তি যোদ্ধা ভাতা স্থগিত নিয়ে কোন অভিযোগ নেই তিনি বলেন,আমি তো স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও স্বাধীন দেশের স্বাধ গ্রহন করেছি। এর চেযে বড় পাওয়ার আর কি আছে?
৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত আর ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া আমার এই সোনার স্বপ্নের বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর ৭ মার্চ ভাষন মনে আছে কি জানতে চাইলে বলেন,এই ভাষন কি ভূলা যায়,তিনি চোখ বন্ধ করে জাতির জনকের সেই দিনের কথা গুলি বলতে থাকেন।
আজ দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি... আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়… আমি, প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। … প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা”।
তিনি আরও বলেন, আমারও স্বপ্ন ছিল যুদ্ধের শেষে স্বাধীন দেশে মনের মত করে সুন্দর সংসার করবো কথা গুলি বলতে বলতে আনমনা হয়ে পড়েন।
এই রকম বীরমুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বারবার হেরে যায় বাংলাদেশ, সে হারায় দুঃখ নেই, আছে লজ্জা, আছে গর্ব, আছে প্রেরণা।
তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,আমার নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি মহান নেতা শেখ মুজিবই হলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। জয়বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু।
৬৮ বছর বয়সী চিরকুমার এই বীর মুক্তিযোদ্ধা সারোয়ার আলম দুলাল এঁর জন্ম ৮ অক্টোবর, ১৯৫৪ খ্রি.।